স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ছলাৎছলাৎ বৈঠার চমৎকার শব্দে মাঝি মাল্লাদের জাড়ি সাড়ি গানে তালে তালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অদ্বৈত মল্লবর্মনের তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
রবিবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহি এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছাসে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি শ্মশান ঘাট থেকে মেড্ডা কালাগাজীর মাজার পর্যন্ত এলাকায় তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয় এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, সরাইল, নাসিরনগর, বিজয়নগর এবং কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা থেকে মোট ১৩টি দল প্রতিযোগী হিসেবে তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং বে-রঙের বাহারি পোশাক পড়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।প্রতিযোগিতা চলার সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাত ছলাত আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। উৎসবে মেতে উঠে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।
আজ রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি শ্বশ্মান ঘাট এলাকায় নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁন।
এ সময় পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আল-মামুন সরকার উপস্থিত ছিলেন।
পরে সন্ধ্যায় মেড্ডা কালাগাজির মাজার এলাকায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, মাউশির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিমা লুৎফুর রহমান ( নাসিমা মুকাই আলী), জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার।
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন সরাইল উপজেলার ওসমান উল্লাহর নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখির নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলার মোর্শেদুল ইসলাম লিটনের নৌকা।
পরে প্রধান অতিথি প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে ১৩ সেফটিক ফ্রিজ ও নগদ ২০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৪০ ইঞ্চি সনি এলইডি টিভি এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ২০ ইঞ্চি এলইডি টিভি উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এছাড়াও প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক দলকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও একটি করে ওভেন প্রদান করা হয়।
নৌকাবাইচ প্রতিযোগীতাকে কেন্দ্রকরে জেলা শহরের আশপাশে তিতাস নদীর দুপাড়ে বহুতল ভবন ও বিভিন্ন নৌপরিবহনের মাধ্যমে দূরদূরান্ত থেকে দলে দলে মানুষ আসতে থাকে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নদীর দুপাশে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীর লক্ষ করা গেছে। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উৎসবে পরিণত হয়ে ওঠে।
এদিকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা সুষ্ঠু সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে ও পোশাক পরিহিতভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও ছিল ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টীম। নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply